১. প্রাচীনভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্র (Medical Science), ২. বাস্তুশাস্ত্রম্ (C-8, Unit II: Scientific and Technical Literature)
C-8, Unit II: Scientific and Technical Literature
(Mathematics,
Chemestry, Medical Science, Astronomy, Vāstuśāstra, Dance and Music)
Unit II: 20 Marks 1 Broad Question --15 Marks; 2. 5 Short Questions in Sanskrit with Devanāgarī 01 x 5 = 05 Marks
১. প্রাচীনভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্র (Medical Science)
ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদ-চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। ঋগ্বেদে,
অথর্ববেদের ভৈষজ্য মন্ত্রে বিভিন্ন
গাছ-লতাপাতার প্রয়োগে রোগ-নিরাময়ের কথা পাওয়া যায়। এই মন্ত্রগুলি প্রাচীন
আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূলস্বরূপ। পরবর্তীকালে উক্ত মন্ত্রগুলির ভাষ্যে চিকিৎসা
পদ্ধতির বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এই শাস্ত্রে অনেক বিখ্যাত আচার্য ছিলেন।
তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—ভারদ্বাজ, আত্রেয়, অগ্নিবেশ, ভেল, হারীত, ক্ষারপাণি,
ধন্বন্তরি প্রমুখ। বৈদিক ও পৌরাণিক যুগে সূর্য, রুদ্রদেবতাগণ, অশ্বিনীকুমারদ্বয়,
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, নারায়ণ, শিব প্রমুখ দেবতাগণ চিকিৎসাশাস্ত্রের আধিকারিকরূপে
অভিনন্দিত হয়েছেন।
অষ্টাঙ্গিক আয়ুর্বেদ—
মধ্যযুগে আয়ুর্বেদের ব্যাপক চর্চার ও প্রসারের ফলে ধীরে
ধীরে অষ্ট অঙ্গবিশিষ্ট চিকিৎসাশাস্ত্রের উদ্ভব হয়। এইগুলি হল—
১. শল্যতন্ত্র (Major
surgery)
২. শালাক্যতন্ত্র (Minor surgery)
৩. কায়চিকিৎসা (Therapeutics)
৪. ভূতবিদ্যা (Demonology)
৫. কৌমারভৃত্য (Pediatrics)
৬. অগদতন্ত্র (Toxicology)
৭. রসায়ন (Elixir)
৮. বাজীকরণ (Aphrodisiacs)
ভারতীয় আয়ুর্বেদের উল্লেখযোগ্য আচার্য এবং তাঁদের গ্রন্থাবলী—
আয়ুর্বেদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনেক মূল্যবান্ গ্রন্থ রচিত
হয়েছিল। এইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—
১. ধন্বন্তরি রচিত চিকিৎসাতত্ত্ববিজ্ঞান, ২. দিবোদাস-রচিত
চিকিৎসাদর্শন, ৩. নকুল-প্রণীত বৈদ্যকসর্বস্ব, ৪. কাশীরাজের চিকিৎসাকৌমুদী প্রভৃতি।
এই গ্রন্থগুলি বর্তমানে লুপ্ত। পরবর্তীকালে যে দুটি গ্রন্থে প্রাচীন আচার্যদের
মতামত সঙ্কলিত হয়েছিল সেগুলি হল—
১. চরকসংহিতা (আনুমানিক খৃঃ প্রথম শতক) এবং ২. সুশ্রুতসংহিতা (আনুমানিক খৃঃ ৫ম-৬ষ্ঠ
শতক)।
চরকসংহিতা—
আচার্য চরক এই গ্রন্থের সংকলয়িতা। কায়চিকিৎসার প্রধান
আচার্য আত্রেয়ের শিষ্য অগ্নিবেশ-রচিত সংহিতার বিশুদ্ধ সংস্করণ এই চরকসংহিতা।
আচার্য চরকের পরবর্তী দৃঢ়বল চরক মূল সংহিতার আরো সংস্কার সাধন করেন। এটিই বর্তমানে
প্রাপ্ত চরকসংহিতা।
চরকসংহিতার আটটি ভাগের বিবরণ—
১. সূত্রস্থান—এই অংশে খনিজ, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ –এই তিন প্রকার
দ্রব্যের বিশ্লেষণ, বিভিন্ন রোগে সেগুলির প্রয়োগ এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আলোচিত
হয়েছে।
২. নিদানস্থান—এই অংশে বিভিন্ন রোগের কারণ, সংক্রমণ প্রভৃতি আলোচিত
হয়েছে।
৩. বিমানস্থান—এখানে মূলতঃ মানবদেহ ও মনস্তত্ত্বের আলোচনা আছে।
৪. শারীরস্থান—এখানে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিবরণ আছে।
৫. ইন্দ্রিয়স্থান—দেহ ও মনের লক্ষণ বিচার করে ভবিষ্যতের রোগ-বিষয়ে
অনুমান এই অংশের মূল আলোচ্য বিষয়।
৬. চিকিৎসাস্থান—এখানে রোগ নিরাময়ের জন্য ঔষধ-প্রস্তুত, ভৈষজ্য ও ধাতব
উপাদানের মিশ্রণ প্রভৃতি আলোচিত হয়েছে।
৭-৮. কল্পস্থান ও সিদ্ধিস্থান—এখানে চিকিৎসকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
আলোচিত হয়েছে।
চরকসংহিতার উপর রচিত উল্লেখযোগ্য টীকাটিপ্পনী—
ভট্টার হরিচন্দ্রের চরকটীকা, আষাঢ়বর্মার পরিহারবার্তিকা,
শিবদাসসেনের চরকতত্ত্বদীপিকা, গঙ্গাধর রায়ের জল্পকল্পতরু, যোগীন্দ্রনাথের চরকোপস্কার
প্রভৃতি।
সুশ্রুতসংহিতা— ধন্বন্তরি-সম্প্রদায় প্রবর্তিত
শল্যচিকিৎসা পদ্ধতির শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ সুশ্রুতসংহিতা। আচার্য সুশ্রুত এই গ্রন্থের
সংকলয়িতা। পরবর্তীকালে নাগার্জুন এর আরো সংস্কার সাধন করেন। গ্রন্থটি ছয়টি অধ্যায়ে
বিভক্ত। এর বিষবস্তু নিম্নরূপ—
১. সূত্রস্থান—শল্যচিকিৎসা বিষয়ক শব্দাবলীর অর্থ এবং ভেষজের শ্রেণীবিভাগ
এই অংশের আলোচ্য বিষয়।
২. নিদানস্থান— রোগের কারণ ও লক্ষণ নির্ণয় এই অংশে
আলোচিত হয়েছে।
৩. শারীরস্থান— এই অংশের আলোচ্য বিষয়-- মানবদেহের বিবরণ
ও ভ্রূণতত্ত্ব।
৪. চিকিৎসাস্থান— এই অংশের আলোচ্য বিষয়-- বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির
বিবরণ।
৫. কল্পস্থান— এই অংশের আলোচ্য বিষয়-- বিভিন্ন ধরণের বিষ, তাদের
প্রতিক্রিয়া ও চিকিৎসা।
৬. উত্তরতন্ত্র— এই অংশে বিবিধ বিষয়ের আলোচনা আছে।
সুশ্রুত শল্যচিকিৎসা পদ্ধতির সাতটি প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এগুলি হল—ছেদন, ভেদন, লেখন, ত্রয্যন, আহরণ, বিস্রবণ ও সীবন। এছাড়া অঙ্গসংস্থান (Plastic surgery), ত্বক্ অধিরোহণ (skin grafting)প্রভৃতির আলোচনাও আছে।
ʻনাবনীতক’ নামে আর একটি গ্রন্থও সুশ্রুতের নামে প্রচলিত আছে।
এখানে tonic প্রস্তুতি ও
প্রয়োগ সম্বন্ধে আলোচনা আছে।
চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখার বিবরণ—
শারীরতত্ত্ব (Anatomy and Physiology)—এই
বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ভাস্করভট্টের ‘শারীরপদ্মিনী,। বিংশ শতাব্দীতে গ্ণনাথসেন
‘প্রত্যক্ষশারীর’ নামে একটি সংকলনগ্রন্থ প্রকাশ করেন।
নিদান— রোগনির্ণয় বিষয়ক চিকিৎসাশাস্ত্র। এই বিষয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ
‘রুগবিনিশ্চয়’ বা ‘মাধবনিদান’।
এছাড়া ধন্বন্তরির নামে প্রচলিত ‘চিকিতসাসংগ্রহ’,
গননাথসেনের ‘সিদ্ধান্তনিদান’ এই প্রজায়ের বিখ্যাত গ্রন্থ।
ভৈষজ্যতত্ত্ব— বিভিন্ন গাছ-গাছড়ার গুণাগুণ নির্ণয় ও চিকিৎসা এর আলোচ্য বিষয়।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—চক্রপাণিদত্তের ‘দ্রব্যগুণসংগ্রহ’, রাজবল্লভের ‘দ্রব্যগুণ’
প্রভৃতি।
কায়চিকিৎসা—জ্বর, অতিসার, কুষ্ঠ, মেহ প্রভৃতি যোগের চিকিৎসা এর আলোচ্য
বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—নাগার্জুনের ‘যোগশতক’ বা ‘যোগসার’, চক্রপাণিদত্তের ‘চিকিৎসাসারসংগ্রহ’,
শার্ঙ্গধরের ‘শার্ঙ্গধরসংহিতা’, ভাবমল্লের ‘ভাবপ্রকাশ’ প্রভৃতি।
কৌমারভৃত্য—এর বিষয় শিশুচিকিৎসা।উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—রাবণ-রচিত
‘কুমারভৃত্য’, অজ্ঞাতনামা লেখকের ‘বালচিকিৎসা’ প্রভৃতি।
স্বাস্থ্যতত্ত্ব— সুস্বাস্থ্য
এর আলোচ্য বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—গঙ্গারামদাসের ‘শারীরনিশ্চয়াধিকার’,
গোবিন্দরায়ের ‘স্বাস্থ্যতত্ত্ব’ প্রভৃতি।
পথ্যতত্ত্ব—পথ্যসংক্রান্ত
আলোচনা এর বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ— সুষেণ-রচিত ‘অন্নপানবিধি’, রঘুনাথের
‘পথ্যাপথ্যনিঘণ্টু’ প্রভৃতি।
নাড়ীবিজ্ঞান— নাড়ীপরীক্ষা ও রোগনির্ণয় এর আলোচ্য বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—
কণাদের ‘নাড়ীবিজ্ঞান’, রাবণ-প্রণীত ‘নাড়ীপরীক্ষা’, গোবিন্দরায়ের নাড়ীপরীক্ষা’
প্রভৃতি।
পশুচিকিৎসা— হস্তিচিকিৎসা, আশ্বচিকিৎসা, গবাদিপশুচিকিৎসা এর মূল আলোচ্য
বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ— নীলকণ্ঠ ও নারায়ণের ‘মাতঙ্গলীলা’ শালিহোত্রের
অশ্বশাস্ত্র প্রভৃতি।
-----
২. বাস্তুশাস্ত্রম্
বাস্তুশাস্ত্রকে
স্থাপত্যবিদ্যা বলা হয়। বস্ ধাতু থেকে বাস্তু
শব্দটি নিষ্পণ্ন হয়েছে। এর অর্থ বাস করা। বাস্তু বলতে বোঝায়
মানুষ যেখানে বাস করে-- ‘বসন্তি প্রাণিনোঽত্র’। ‘সমরাঙ্গণসূত্রধার’ গ্রন্থে বলা হয়েছে—
‘ভূরেব মুখ্যং
বস্তু তত্র জাতানি যানি হি।
প্রাসাদাদীনি
বস্তূনি বস্তুত্বাদ্ বস্তুসংশ্রয়াৎ’।।
-- ভূ বা
ভূমি হচ্ছে মুখ্য বস্তু (বাস্তু), এর উপর যে সমস্ত প্রাসাদ প্রভৃতি নির্মিত হয়,
তাও বাস্তু।
স্মৃতিশাস্ত্রে
ও পুরাণসাহিত্যে বাস্তুশাস্ত্রের পরিধি আরো অনেক ব্যাপক ধরা হয়েছে। গরুড়পুরাণে বলা
হয়েছে—
‘আবাসবাসবেশ্মাদৌ
পুরে গ্রামে বণিক্পথে।
প্রাসাদারামদুর্গেষু
দেবালয়মঠেষু চ’।।
-- আবাসস্থল,
বাসগৃহ, প্রাসাদ, অট্টালিকা, উদ্যান প্রভৃতি নির্মাণ, নগরপত্তন, বাণিজ্যস্থান,
রাজপথ, দুর্গ, মন্দির, মঠ প্রভৃতি নির্মাণ বাস্তুশাস্ত্রের অন্তর্গত।
অর্থশাস্ত্রে
বলা হয়েছে-- ‘গৃহক্ষেত্রমারামঃ
সেতুবন্ধস্তড়াকমাধারো বা বাস্তু’।
বিভিন্ন
গ্রন্থের উক্তি পর্যালোচনা করে এটা বলা যায় যে, গৃহ, অট্টালিকা, প্রাসাদ, সেতু,
দুর্গ, বাঁধ, রাস্তা, উদ্যান প্রভৃতি নির্মাণসংক্রান্ত যে শাস্ত্র বা বিদ্যা তাকেই
বাস্তুবিদ্যা বা বাস্তুশাস্ত্র বলে।
সিন্ধুসভ্যতার
বাস্তুশাস্ত্র--
খ্রীষ্টপূর্ব
তিন হাজার বছরেরও পূর্বে ভারতীয়গণ বাস্তুশাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন।
অট্টালিকা, শস্যভাণ্ডার, স্নানাগার প্রভৃতি নির্মাণ, নগরপরিকল্পনা এবং নাগরিক
স্বাচ্ছন্ন বিধানের ক্ষেত্রে ভারতীয় সভ্যতা উল্লেখযোগ্য দক্ষতা দেখিয়েছে।
সিন্ধুসভ্যতা এই বিষয়ে উৎকৃষ্ট নিদর্শন। মহেঞ্জোদরো, হরপ্পা, গুজরাটের লোথাল,
রাজস্থানের কলিবঙ্গন প্রভৃতি স্থানে প্রাপ্ত সিন্ধুসভ্যতার ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন ভারতীয়গণের
স্থাপত্যবিদ্যায় সমুন্নত দক্ষতার পরিচয় বহন করে।... Read More

Comments
Post a Comment